ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তরে ১২ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক হয়েছিল। কাগজে-কলমে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা এবং নতুন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বাগত জানানোই ছিল ওই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল এমন একটি দিন, যখন ট্রাম্প প্রশাসন প্রায় তিন বছর চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি ন্যাটোর দৃষ্টিভঙ্গিকে পুরোপুরিভাবে উল্টে দিয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি সামনে এনেছে, যা মস্কোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবির পক্ষে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।
ন্যাটোর জন্য সামনের দিনগুলো যে মসৃণ হবে না, আগে থেকেই তার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। ইউক্রেনের অনুকূল শান্তি চুক্তির প্রত্যাশায় জল ঢেলে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহের শুরু করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ ফেব্রুয়ারি ফক্স নিউজে বলেছেন, ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড হয়তো কোনো একদিন রাশিয়ার দখলে চলে যেতে পারে। যদিও ট্রাম্পের এই মন্তব্যের ব্যাপারে এখনো মুখ খোলেননি ইউরোপের নেতারা।
১২ ফেব্রুয়ারি লাটভিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রিস স্প্রুডস বলেছেন, ‘এখন নানা রকম কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে খুব স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।’
সম্মেলন-পূর্ব ব্রিফিংয়ে ফক্স নিউজকে দেওয়া ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের বিষয়ে সিএনএনের করা এক প্রশ্ন পুরোপুরি এড়িয়ে যান ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট। এ সময় তিনি শুধু বলেন, ‘আমরা সব স্তরে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। তাদের সঙ্গে খুব ভালো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে।’
ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে দিনের শেষের দিকে যখন ন্যাটোর মন্ত্রীরা রাশিয়ার আগ্রাসন বন্ধের উপায় খুঁজছিলেন, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৯০ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন। এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জ্বলন্ত উদাহরণ।
তবে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার না–ও হতে পারে। ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার ন্যাটো জোটের ঘোষিত একটি নীতিকে রাতারাতি নড়বড়ে পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ন্যাটো একসময় বলেছিল, ইউক্রেনের জন্য জোটটির সদস্যপদ পাওয়ার পথ অপ্রতিরোধ্য।
কিন্তু ন্যাটোর ওই বৈঠকে পিট হেগসেথ স্পষ্টভাবে বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্যপদ লাভের প্রত্যাশাকে বাস্তবসম্মত বলে মনে করছে না যুক্তরাষ্ট্র।
ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের এই দুটি অবস্থান আসলে অসংগতিপূর্ণ নয় বলে যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ইউরোপের অনেক নেতা।